মহানগর ডেস্ক: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষের মতন সারা বিশ্বে সমাদৃত। সারা বিশ্ব জুড়ে তার অসংখ্য সাহিত্য, রচনা, কবিতা , তার অসামান্য কৃতি। বাংলার ‘ক্লাসিক’ সাহিত্য, সব সময়ই শ্রেষ্ঠতর। আর সেটি যদি কবিগুরুর রচনা হয় তাহলেতো কোনো কথাই নেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ আমাদের কমবেশি প্রত্যেকেরই জানা। এবার সেই ‘ – কেই নিজের মতন করে , দ্বিধাহীন ভাবে সিনেমার পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। ১৯৬৫ সালের ভারত – পাক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের মুখ্য দুটি চরিত্র ‘মিনি’ আর ‘কাবুলিওয়ালা’ কে নিয়ে রচিত হলো রবীন্দ্র – রচনার ভিত্তিতে তৈরি ছবি ‘কাবুলিওযালা’। ‘কাবুলিওযালা’-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। পরিচালক সুমন ঘোষ ভয়হীন ভাবেই কবিগুরু- র এই রচনাকে নিজের ভাষায় প্রকাশ করে ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছেন আপামর বঙ্গবাসী থেকে শুরু করে ভারতবাসীর মধ্যে।
১৯৬৫- র প্রেক্ষাপটের এই গল্পে বার বার কাবুলিওয়ালাকে বলতে শোনা গেছে , “আমি পাকিস্তানি নই, আফগানিস্তানের পাঠান।”
‘কাবুলিওয়ালা’-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তীর মতন প্রতিভাবান শিল্পী। যাকে ‘কাশ্মীর ফাইলস’ এর মতন সিনেমা করতে দেখা গেছে, শুরু থেকেই প্রতিবাদী কণ্ঠ মিঠুন চক্রবর্তী। একাধিক প্রতিবাদী সিনেমাতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করে তিনি যেমন সততার পরিচয় দিয়েছেন তেমনি ‘কাবুলিওয়ালা’-র মতন চরিত্রে অভিনয় করে ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন তিনি। শিল্পীর আসলে কোনো জাত – ধর্ম – রং থাকেনা, সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি তার অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে।
ছোট্ট মিনি অর্থাৎ অনুমেঘা কাহালির অভিনয় ও অসাধারণ । তার কথা বার্তায় এতটুকু ও ফাঁক ফোকর নেই। ছোট্ট মিনি কাবুলিওয়ালা অর্থাৎ রহমত এর সাথে বন্ধুত্বে মিশে গেছে, দুই চরিত্রের রসায়ন দুর্দান্ত। যে বন্ধুত্ব কোনো স্বার্থের নয়। যে বন্ধুত্ব হাজার একটা ছোট্ট মিনির জীবনের গল্পের সাথে জড়িত।যে বন্ধুত্ব ধর্ম – বর্ন – জাত পাতের বহু উর্ধ্বে । রবীন্দ্র – রচনার এই গল্পে অসাধারণ অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী ওরফে সিনেমার রহমত।
সিনেমাতে আর একবার ফিরে দেখা বিশ্বকবির রচনা।ছবিতে এদেশে সওদা(ব্যবসা) করতে আসা রহমতকে বার বার বলতে হয়েছে,“আমি পাকিস্তানি নই, আফগানিস্তানের পাঠান।” মিনির বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়, যা বরাবরের মতনই নজরকাড়া অভিনয়। কিছুটা যুক্তিবাদী একটু ধর্মান্ধতার উপরে।এক কথায় বাঙালি- নিপাট ভদ্রলোক। মিনির মায়ের চরিত্রটি একটু ভিন্ন।মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহিনী সরকার। ঘরোয়া মহিলাদের একটি চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। ধর্মের গণ্ডিতে আবদ্ধ, সন্তানের প্রতি অতিব চিন্তাশীল ও সাবধানী। সব কটি চরিত্রই নিজ নিজ জায়গা থেকে খুব ভালো অভিনয় করেছে। অন্যদিকে ভোলার চরিত্রে সুমিত পোদ্দার ও মোক্ষদার চরিত্রে গুলশানারা খাতুনের অভিনয় অসামান্য।
ধর্মভেদের অশিক্ষার অন্ধকার কতটা মানুষকে অমানবিক করে তোলে তা এই ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক সুমন ঘোষ। বিশেষ করে ছবির একটি অংশে দেখা যায় যেখানে মিনির বাবা – মায়ের ঘরোয়া কথোপকথনে কাবুলিওয়ালার খাদ্যাভ্যাস জাত – ধর্মের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘কাবুলিওয়ালা -র সঙ্গে অনেকেরই নস্ট্যালজিয়া জড়িয়ে আছে। এই ছোট গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৮৯২ সালে । বাংলা এবং হিন্দি, দুই ভাষাতেই এই গল্প অবলম্বনে ছবি তৈরি হয়েছে। তবে ১৯৫৬ পরিচালক তপন সিনহা পরিচালিত ‘কাবুলিওয়ালা’ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পায়। বহু বছর পর বড় পর্দায় ফের প্রকাশিত হল কাবুলিওয়ালা ও তার আদরের মিনির গল্প।
গল্পে যে অপরাধে রহমতের সাজা হয়েছিল, সেখানে মিনির প্রসঙ্গ ছিল না। এখানে মিনিকে নিয়ে এক দুর্জনের কটূক্তির জেরেই মাথা ঠিক রাখতে পারে না রহমত। এ ছবির ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে খাপ খেয়ে গিয়েছে বিষয়টি। ১৫ বছর পরে যখন জেল থেকে বেরোয় সে, চুল-দাড়িতে পাক ধরেছে। মিঠুনের চেহারায় এই সময়ের ফারাকটা ধরা সহজ হলেও বিসদৃশ লেগেছে মিনির বাবা-মায়ের ভূমিকায় আবীর চট্টোপাধ্যায় ও সোহিনী সরকারের বয়স্ক মেকআপ। ১৫ বছরের তফাত প্রায় কিছুই ধরা পড়েনি তাঁদের চেহারায়। যদিও গল্পের গুনে এবং মিঠুনের পারফরম্যান্স – র জেরেই সিনেমা দর্শকের হৃদয় কেরে নিয়েছে ।সাথে ছিল ছোট্ট মিনির অভিনয়।মিনির সঙ্গে রহমতের রসায়ন এই গল্পের মেরুদণ্ড। মোটের উপর শীতের আমেজে এবং সাম্প্রতিক সময় কালে এমন একটি ছবিই যেনো চেয়েছিলেন বঙ্গবাসী তা পূর্ণ হলো ‘কাবুলিওয়ালা’- তে।